এখন বিয়ের ভরা মৌসুম। কারও বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে, আবার কারও বিয়ের আলোচনা চলছে। তবে বিয়ের আয়োজন একেবারে মুখের কথা নয়। এ জন্য মোটামুটি অর্থকড়ির প্রয়োজন। তাই বিয়ের সার্বিক খরচে টান পড়লে অনেকেই আত্মীয়স্বজন কিংবা বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে টাকা ধার নেন। কেউ কেউ তা পান না। তাদেরই একটা অংশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হন। কিন্তু এবার যারা ঋণ নিয়ে বিয়ে করতে চান, তাঁদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক। কারণ, ভোক্তাঋণের আওতায় ব্যাংকগুলো আগে যেভাবে ঋণ দিত, এবার সেভাবে দিচ্ছে না। তারা বিয়েতে ঋণ দেওয়া কমিয়েছে। তারা এখন শিক্ষাঋণ দিতেই বেশি আগ্রহী।
তফসিলি ব্যাংকগুলোর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি হালনাগাদ প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দেশের সব ব্যাংকে বিবাহঋণের মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫১ কোটি ৩৯ লাখ, গত বছরের একই প্রান্তিকে যা ছিল ৫৪ কোটি ৭১ লাখ। গত এক বছরে এই খাতে ঋণ কমেছে ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
এদিকে ব্যাংকাররা জানান, তারা অনেক ক্ষেত্রে বিয়ের জন্য ঋণ দিতে চান না। আবার অনেক গ্রাহকের ধারণা, বিয়ের জন্য ঋণ চাইলে ব্যাংক তাঁদের ঋণ না–ও দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাঁরা ভোক্তাঋণ হিসেবে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বিয়ের খরচ মেটান। তাই কিছু ঋণ বিয়ের ঋণের স্থিতিতে যুক্ত হয় না।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে শিক্ষার জন্য দেওয়া ব্যাংকগুলোর ভোক্তাঋণের পরিমাণ ছিল ৪৭৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা, যা চলতি বছরের একই প্রান্তিক শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৪০ কোটি ৯৪ লাখ। এক বছরের ব্যবধানে শিক্ষায় ব্যাংকগুলোর দেওয়া ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১৬০ শতাংশ বা আড়াই গুণের বেশি।
বিয়ের জন্য যেসব ব্যাংক ঋণ দেয়, তার মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হলো মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আইডিএলসি ফাইন্যান্স বিবাহের জন্য ঋণ দিয়ে থাকে।
ব্যাংকগুলো শুধু যে বিবাহের জন্যই ঋণ দেয় তা নয়, এ জন্য তাদের সঞ্চয়ী পণ্যও আছে। যেমন ঢাকা ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক মুদারাবা বিবাহ আমানত সংগ্রহ করে থাকে। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের আছে বিবাহ সঞ্চয়ী স্কিম। ব্যাংকগুলো বিয়ের জন্য যে ঋণ দিয়ে থাকে, তা ভোক্তাঋণের মধ্যে পড়ে। ব্যাংকগুলো সাধারণত এই খাতে ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে।
শিক্ষা বা শিক্ষার্থীদের জন্য যেসব ব্যাংক ঋণ দেয়, তার মধ্যে অন্যতম মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও ওয়ান ব্যাংক।
দেশের মধ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকে। কোনো কোনো ব্যাংক শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্য ঋণসুবিধা দেয়। কেউ আবার ঋণ দেয় উচ্চশিক্ষার জন্য, যারা বিদেশ যেতে চায় তাদের। শিক্ষাঋণের আকার ৫০ হাজার থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটাও একধরনের ভোক্তাঋণ। বিয়ে ও শিক্ষাঋণের সুদ ভোক্তাঋণের মতো হয়ে থাকে। নানা মেয়াদে এসব ঋণ পরিশোধ করা যায়।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষা বা শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া ব্যাংকঋণের বড় অংশ নিয়ে থাকেন দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকের আয় ও লেনদেনের তথ্য যাচাই করে তবেই ব্যাংকগুলো এই ঋণ দেয়। বর্তমানে দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এ ধরনের ঋণের চাহিদা বাড়ছে।
চলতি বছরের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেসকোর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন প্রায় ৫৩ হাজার শিক্ষার্থী। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে এসব বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর পছন্দের শীর্ষে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। গত এক বছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষার্থী। উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের অন্য উল্লেখযোগ্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, মালয়েশিয়া, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুসারে, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। এর মধ্যে বিবাহিত মানুষ ১১ কোটির বেশি। এদিকে বিবাহ-তালাক পোর্টালের তালিকা অনুযায়ী, দেশে বিয়ে নিবন্ধকের সংখ্যা ৫ হাজার ৯১০। তবে সরকারি এই পোর্টালে দেশে প্রতিবছর কত বিবাহ হয়, তার কোনো তথ্য নেই। প্রথম আলো
আপনার মতামত লিখুন :