ব্যক্তিগত আর্থিক ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা সবচেয়ে ভালোভাবে বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনা করার বিষয়ে নানা রকম পদ্ধতি রয়েছে। আপনার ব্যক্তিগত আর্থিক ব্যবস্থাপনায় এর যে কোনোটি আপনি বেছে নিতে পারেন। বেশ জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি হলো ৫০-৩০-২০ পদ্ধতি।
এটি ব্যবহার করলে আপনি একটা ধারণা পেতে পারেন যে প্রতি মাসে আপনি কত খরচ করবেন, আর কত টাকা সঞ্চয় করবেন। ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
৫০–৩০–২০ পদ্ধতি
এই পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনি আপনার আর্থিক কর্মকাণ্ডকে তিনটি ভাগে ভাগ করবেন। এগুলো হলো চাহিদা, সঞ্চয় ও আকাঙ্ক্ষা। আপনার আয়ের ৫০ শতাংশ আপনি খরচ করবেন জীবন ধারণের জন্য যেসব চাহিদা রয়েছে, তার পেছনে। এসব চাহিদার মধ্যে থাকে আপনার ঘরবাড়ির জন্য ব্যয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদি। আয়ের ৩০ শতাংশ আপনি খরচ করবেন আপনার আকাঙ্ক্ষার পেছনে। যেমন বাইরে বেড়ানো, মাঝেমধ্যে রেস্তোরাঁয় খাওয়া কিংবা ভ্রমণের মতো কর্মকাণ্ডের পেছনে। আর ২০ শতাংশ আয় আপনি খরচ করবেন বিনিয়োগের পেছনে। এসব বিনিয়োগ হবে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি।
শতাংশের এই হিসাব অবশ্য আপনি আপনার বয়স, পরিস্থিতি, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে একটু অদলবদল করতে পারেন।
চাহিদার পেছনে ৫০ শতাংশ
আপনার জীবনে এমন খরচ আছে যা আপনাকে নিয়মিতভাবে করতেই হয়। এসব ব্যয় আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে অগ্রাধিকার পায়। তাই আপনার আয়ের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত এসব খরচের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। এগুলোই চাহিদা—যার মধ্যে থাকতে পারে বাড়িভাড়া, বিভিন্ন পরিষেবার বিল, নিত্যপণ্য, চিকিৎসাসেবা, বিমার প্রিমিয়াম, সন্তানের পড়াশোনার খরচ এবং এ ধরনের আরও কিছু।
আকাঙ্ক্ষা পূরণে ৩০ শতাংশ
আপনার জীবন ধারণের প্রয়োজনে অনেক কিছু থাকে, যেগুলো থাকতেই হবে এমন নয়, তবে এসব ছাড়া আজকের জীবন হয়তো অনেকে চিন্তাও করতে পারেন না। অর্থাৎ কিছুটা আয়েশি, কিছুটা বিলাসী এসব উপকরণের পেছনে আপনি খরচ করেন। জীবন বাঁচাতে হয়তো এসবের পেছনে খরচ না করলেও চলে, তবে এর অনেক কিছুই হয়তো আবার জীবনের অংশ হয়ে গেছে।
জীবন ধারণের জন্য এসব খরচ না করলেও চলে, তবে আধুনিক জীবনযাত্রার জন্য এসব খরচ অনেক ক্ষেত্রে এখন অনেকটা অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আপনি এসবের জন্য আয়ের ৩০ শতাংশ খরচ করতে পারেন।
আপনার আয়ের বাকি ২০ শতাংশ অবশ্যই সঞ্চয় ও বিনিয়োগের জন্য রাখা উচিত। আপনার একটি ভবিষ্যৎ আছে এবং সেই ভবিষ্যৎ নিরাপদ করার জন্য অবশ্যই কিছু অর্থ জমানো প্রয়োজন। তবে শুধু জমানো নয়, ওই টাকার ভালো বিনিয়োগও দরকার। এই জমানো অর্থ হয়তো আপনার জরুরি প্রয়োজন মেটাতে পারে, যেমন চিকিৎসার পেছনে খরচ, বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা গাড়ি মেরামত।
আপনি হয়তো এই অর্থ জমানোর জন্য একটি আলাদা ব্যাংক হিসাবও খুলতে পারেন, যাতে নিয়মিত খরচের জন্য এই অর্থ ব্যবহার করতে না হয়।
কীভাবে এই পদ্ধতি ব্যবহার করবেন
আর্থিক ব্যবস্থাপনা করার সময় এই পদ্ধতি কার্যকরভাবে ব্যবহারের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছে ভারতের কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাংক।
প্রথমত আপনাকে যা করতে হবে, তা হলো আপনার আয়ের হিসাব কষা। এরপর যেসব খাতে আপনি খরচ করেন, সেগুলো চাহিদা, আকাঙ্ক্ষা ও সঞ্চয়ের ভিত্তিতে ভাগ করে ফেলুন। আগেই যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, এই ভাগ হবে ৫০ শতাংশ, ৩০ শতাংশ ও ২০ শতাংশের হিসাবে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনার আয় যদি ৬০ হাজার টাকা হয়, তাহলে ৩০ হাজার টাকা আপনি বরাদ্দ করতে পারেন চাহিদার পেছনে। বাকি অর্থের মধ্যে ১৮ হাজার টাকা আকাঙ্ক্ষার পেছনে এবং ১২ হাজার টাকা আপনি বরাদ্দ রাখতে পারেন সঞ্চয় ও বিনিয়োগের জন্য।
তবে আপনি যদি দেখেন এক খাতে বেশি বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে, তাহলে অন্য খাতের সঙ্গে সমন্বয় করুন। মূল্য লক্ষ্য হলো যতটা সম্ভব ৫০–৩০–২০ পদ্ধতি অনুসরণ করা।
এভাবে আপনি আপনার চাহিদা পূরণ করতে পারেন, কিছু টাকা খরচ করতে পারেন আপনি পছন্দ করেন এমন সব পণ্য বা সেবা কিনতে, আর দীর্ঘ মেয়াদে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। এসব কিছুই আপনি করতে পারেন আপনার জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে আপস না করেই।
আপনার মতামত লিখুন :