সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নিয়ে নতুন উদ্যোগ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২৩, ০৪:২৬ পিএম

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নিয়ে নতুন উদ্যোগ

কর্মচারী আচরণ বিধিমালা অনুসরণ করে সরকারি কর্মচারীরা গত ১৫ বছর ধরে সম্পদের হিসাব দিচ্ছেন না। সরকারও এ বিষয়ে দৃশ্যমান কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। গত চার বছর ধরে কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ২০১৮ সংশোধনের কথা বলা হলেও তা সংশোধন হচ্ছে না। কর্মচারীদের বড় একটি অংশ মনে করছেন প্রতি বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে আয়কর রিটার্ন জমা দিচ্ছেন, তাই আচরণ বিধিমালা অনুসরণ করে সম্পদ হ্রাস-বৃদ্ধি উলে­খ করে সরকারের কাছে সম্পদ বিবরণী দেওয়ার দরকার নেই।

অপর দিকে আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, এই বিধিমালা অনুসরণ করে সব কর্মচারীর সম্পদ বিবরণী সরকারের কাছে পেশ করা বাধ্যতামূলক। তারা আরও বলছেন, সরকার চাইলে আচরণ বিধিমালা সংশোধন, পরিমার্জন কিংবা বাতিল করে নতুন কোনো পদ্ধতি চালু করতেই পারে। কিন্তু বাতিল না হওয়া পর্যন্ত প্রজাতন্ত্রের সব কর্মচারীর জন্য তা অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করা অপরিহার্য।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মো. ফিরোজ মিয়া বলেন, আইন কিংবা আচরণবিধি সংশোধন হতেই পারে। কিন্তু সেই অজুহাতে সম্পদের হিসাব নেওয়া হবে না এটা আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সরকারি কর্মচারী আইন ও সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা সংশোধনের কাজ চলমান। আইন সংশোধনের আগে আচরণ বিধিমালা সংশোধন হবে না। তিনি আরও জানান, আইনটি জাতীয় সংসদে পাশের অপেক্ষায় রয়েছে।

এমন বাস্তবতায় গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আবার জানা গেছে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নিতে একটি নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন হচ্ছে। ওই পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী সিস্টেম’। এই পদ্ধতিতে সরকারি কর্মচারী ও সরকারি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব শ্রেণির ব্যবসায়ীর সম্পদের হিসাব নেবে সরকার। সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী সিস্টেমের সঙ্গে একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ জড়িত। সে কারণে ওই পদ্ধতির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

জানা গেছে, গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রশাসনকে সভাপতি করে সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী সিস্টেমের কাঠামো তৈরির জন্য কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বিআরটিএ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও প্রশিক্ষণ), অতিরিক্ত সচিব (বিধি), অতিরিক্ত সচিব (শৃঙ্খলা ও তদন্ত), যুগ্ম সচিব পিএসিসি, আইসিটি বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, সিস্টেম এনালিস্টকে (পিএসিসি) সদস্য এবং উপসচিবকে (শৃঙ্খলা-৪) সদস্য সচিব করা হয়। কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত সচিব লুৎফুন নাহার বেগম অসুস্থ থাকায় দীর্ঘদিন কমিটির কোনো বৈঠক হয়নি।

ছয় মাস পর গত ৪ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুস সবুর মন্ডলের সভাপতিত্বে সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী সিস্টেম প্রণয়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।

জানতে চাইলে আব্দুস সবুর মন্ডল বলেন, আমি এই কমিটির কেউ নই। অন্যরা দায়িত্ব পালন করেন। তাদের অনুপস্থিতিতে আমি সভাপতিত্ব করেছি মাত্র।

কী সিদ্ধান্ত হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি অনেক বড়। এ বিষয়ের ওপর আরও অনেক মিটিং হবে। তবে প্রাথমিকভাবে কমিটিকে আমরা ছয় মাস সময় দিয়ে সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী সিস্টেমের কাঠামো তৈরি করতে বলেছি। ছয় মাস পর পরবর্তী মিটিংয়ে কাঠামোটা উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।

সভায় উপস্থিত কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, অতিরিক্ত সচিব লুৎফুন নাহার খুবই অসুস্থ। এমন একজন কর্মকর্তাকে এত বড় একটা কাজের কমিটির সভাপতি করায় সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী সিস্টেম ও কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গত ৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান, ব্যাংকগুলো আমানতকারীর কোনো তথ্য দিতে চায় না। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাব জবাব আমানতকারীর গোপনীয়তা রক্ষা না করা গেলে ব্যাংকিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী সিস্টেমের উদ্দেশ্য কী তা স্পষ্ট হতে হবে। কোনো দপ্তর বা সংস্থার কী ধরনের কাজ করার এখতিয়ার রয়েছে তা বিবেচনায় নিতে হবে। মানুষের ‘রাইট টু প্রাইভেসি’ যাতে নষ্ট না হয় সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতিনিধি আয়কর আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে এনবিআরের কাছে সংরক্ষিত ব্যক্তিগত সম্পদের তথ্য তারা যে কাউকে দিতে পারেন না।

অপর দিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শৃঙ্খলা ও তদন্ত) বৈঠকে অংশ নিয়ে বলেন, অনেক সরকারি কর্মচারী আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন না। তাদের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ খুবই জটিল কাজ। বিষয়গুলো নিয়ে গভীর অনুসন্ধান প্রয়োজন।

কমিটির এক সদস্য বলেন, সরকারি কর্মচারী আইন সংশোধনে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। আর আইন সংশোধনের পর আচরণ বিধিমালা সংশোধনের কাজে হাত দেবে। শেষ পর্যন্ত বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদে সরকারি কর্মচারীদের কাছ থেকে সম্পদের হিসাব নেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে বলে মনে করেন কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র: যুগান্তর

গো নিউজ২৪

Link copied!