তাবলিগের বিরোধটা আসলে কোথায়

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৪, ০৭:২৬ পিএম

তাবলিগের বিরোধটা আসলে কোথায়

ভারতের মাওলানা ইলিয়াসের হাত ধরে তাবলিগ জামাতের প্রচার ও প্রসার শুরু হয়। তাবলিগের শুরু থেকে মাওলানার উত্তরসূরিরাই এ দাওয়াতি কাজের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব-ইজতেমায় বরাবরই মাওলানা ইউসুফ, মাওলানা এনামুল হাসান, মাওলানা জুবায়েরুল হাসান ও মাওলানা সাদ কান্ধলভী অংশগ্রহণ করেছেন। 

তাবলিগ জামাত সবসময় ভারত ও পাকিস্তানের কওমি মাদ্রাসার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে চলছিল। বাংলাদেশেও সেভাবেই এর সূচনা হয়। মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী, মাওলানা আব্দুল আজিজ, মাওলানা আকবর আলী, মাওলানা হরমুজ উল্লাহসহ আলেম-ওলামদের নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানে তাবলিগ আজকের এ অবস্থানে পৌঁছায়।

১৯৯৫ সালে মাওলানা এনামুল হাসান মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি তাবলিগের ১০ সদস্যকে নিয়ে শূরা ব্যবস্থা প্রণয়ন করেন। যেন তার অনুপস্থিতিতে শূরা সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এটি ২০১৫ সাল পর্যন্ত বলবৎ ছিল। ২০১৫ সালে তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইলিয়াসের প্রপৌত্র মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির করা হয়।
২০১৭ সালে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বেশ কিছু বক্তব্য ও বিবৃতি ইসলামের মূল আকিদা ও বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসাসহ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও অফ্রিকার শীর্ষ কওমি মাদরাসাগুলো থেকে ফতোয়ার মাধ্যমে অভিযোগ করা হয়। 

ভারতের সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানি, বাংলাদেশের আল্লামা আহমদ শফি ও দক্ষিণ আফ্রিকার মুফতি ইব্রাহিম দেসাইসহ বিশ্ববরেণ্য বহু আলেম-মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের আবেদন জানান। 

মাওলানা সাদ ও তার অনুসারীরা বিষয়টি বরাবরই কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও কওমি মাদ্রাসার আলেম-ওলামারা তাদের দাবি থেকে এতটুকুও সরতে রাজি হননি। তারা মাওলনার মতামতকে ভ্রান্ত প্রমাণের জন্য কুরআন-হাদিসের আলোকে সভা-সেমিনারের আয়োজন, বই-পুস্তক প্রণয়ন, লিফলেট ও প্রচারপত্র বিতরণ এমনকি প্রতিবাদে সভা-সমাবেশেরও আয়োজন করতে থাকেন। একসময় মাওলানা সাদের নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আলেমরা। চরম দ্বন্দ্ব শুরু হয় তাবলিগের বিশ্ব মারকাজ দিল্লির নিজামুদ্দিনেও। ২০১৮ সালে এই দ্বন্দ্বে পৃথক হয়ে পড়েন তাবলিগের অনুসারীরা। তাবলিগ জামাতের মধ্যে সৃষ্টি হয় দুই পক্ষের। 

মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে পৃথক ফতোয়া দিয়ে বৈশ্বিকভাবে দারুল উলুম দেওবন্দের নীতি অনুসরণ করা হয় কওমি ও দেওবন্দিধারার মাদ্রাসাগুলোয়। এই দ্বন্দ্বের রেশ এসে পড়ে বাংলাদেশেও। দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসরণে বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসার অনুসারীরাও মাওলানা সাদের বিপক্ষে অবস্থান নেন। তারা মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। ২০১৮ সালের পর থেকে কওমি মাদ্রাসার আলেমদের বাধার মুখে মাওলানা সাদ আর বাংলাদেশের কোনো ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি।

গো নিউজ২৪

Link copied!