দেশে যেসব ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেগুলো সরকারিভাবে মনিটরিং করতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন আলিয়া ধারার মাদ্রাসা প্রধানরা। তারা বলছেন, সারা দেশে প্রায় তিন লাখ মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদের খতিব ও ইমামের দায়িত্ব পালন করেন যারা, তাদেরসহ বছরে প্রায় দুই লাখ ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শীতকালে মাহফিল হচ্ছে তুলনামূলক বেশি। তবে বিভিন্ন মাহফিলে অনেক বক্তা আপত্তিকর কথা বলার চেষ্টা করেন। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ওয়াজ মাহফিল সরকারিভাবে মনিটরিংয়ের দাবি তুলেছেন তারা।
সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠকে মাদ্রাসা প্রধানদের পক্ষে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ কামনা করে প্রস্তাবনা তুলে ধরেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকার সিফাতুল-ই কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল ফারহা মোহ্ম্মদ ফরিদ উদ্দিন। গত ১৭ জানুয়ারি রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে নতুন শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, আমাদের দেশে তিন লাখ মসজিদ আছে। বছরে দুই লাখ মাহফিল হয়। শীতকালীন মাহফিল শুরু হয়েছে। এই মাহফিলগুলোতে অনেক সময় অনেক বক্তা অনেক বিষয়ে বাজে কিছু বলার চেষ্টা করে। আর একটি কিছু হলে তা ১০টি বানানোর চেষ্টা করে। তাই ওয়াজ মাহফিলগুলো সরকারিভাবে মনিটরিং করা দরকার।
জানতে চাইলে অধ্যক্ষ আবুল ফারহা মোহ্ম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীকে বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমাদের যেসব বক্তা রয়েছেন তাদের বক্তব্যগুলো যেন মনিটরিং করা হয়। এছাড়া আমাদের আলিয়া ধারার যেসব আলেম-ওলামা রয়েছেন তারাও তো বিভিন্ন মাহফিলে ওয়াজ-নসিহত করেন। আমাদের আলিয়া ধারার যে আলেমরা বক্তব্য দেন, তাদের একটু সচেতন করে দেন। মাননীয় মন্ত্রী যেন একটি মেসেজ দিয়ে দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই লাইনের (আলিয়া ধারার) যারা আলেম-ওলামা রয়েছেন, দেশে তিন লাখ মসজিদ রয়েছে, সেসব মসজিদে তিন লাখ খতিব রয়েছেন। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ আলিয়া ধারার আলেম-ওলামা নামাজ পড়ান। আর ৫০ শতাংশ কওমি ধারার আলেম-ওলামা নামাজ পড়ান। দেশে বছরে দুই লাখ মাহফিল হয়, এক লাখ মাহফিলে আলিয়া ধারার আলেম-ওলামারা ওয়াজ নসিহত করেন এবং এক লাখ কওমি ধারার আলেম-ওলামরা ওয়াজ নসিহত করেন। আমাদের আলিয়া ধারার যেসব খতিব ওয়াজ-নসিহত করেন, তারা যদি মাঠে ময়দানে যারা বিভ্রান্তি ছড়ায় তার জবাব দিয়ে দেন ও সচেতন থাকেন, তাহলে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারবে না। গুজব ও মিথ্যা প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। এটাই হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্য।’
অধ্যক্ষ আবুল ফারহা মোহ্ম্মদ ফরিদ উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরা শুধু মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীকে বলেছি তাই নয়, আমরা ধর্মমন্ত্রীকেও এই প্রস্তাব দেবো। যেহেতু দেশের মসজিদগুলো ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনেক মসজিদে যে ইসলামি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে গণশিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে সেই এই গণশিক্ষায় অনেক কওমি ধারার লোকও রয়েছেন। ধর্ম মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি যদি একটু মাথায় নেয়, এসব বিষয় ধর্ম মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনিটরিং যেন করে।’
তিনি যোগ করেন, ‘এ দেশে ধর্মীয় কথাবার্তা সবাই বলেন। কারণ, দেশটি মুসলমান প্রধান। দেশে মসজিদ থাকবে, ওয়াজ থাকবে। ধর্ম নিয়ে মানুষের আবেগ কাজ করে। এটার ওপর কেউ হস্তক্ষেপ করবে না। কিন্তু দেশের বিরুদ্ধে, সমাজের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা করতে চায়, মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, সেটা অবশ্যই দেখতে হবে। কারণ, সরকারের একটা দায়িত্ব আছে। প্রকৃত দীনি শিক্ষার মধ্যে আছে, দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ। দেশকে ভালোবাসা, দেশের উন্নতি কামনা করা আমাদের ইমানি দায়িত্ব, নাগরিক দায়িত্ব। এসব বিষয় নিয়ন্ত্রণে না থাকার কারণে যে যার মতো যত্রতত্র ওয়াজ-মাহফিল করেন।’
ওয়াজ মনিটরিং করা হবে কিনা বা এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনও ব্যবস্থা নেবে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য দিয়ে যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট না করে, বিশৃঙ্খলা ছড়াতে না পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাছাড়া আলিয়া ধারার মাদ্রাসাগুলোকে সরকার বেতনের শতভাগ দিয়ে থাকে। এই ধারার আলেম-ওলামাদের সচেতন থাকতে এবং রাষ্ট্রের পক্ষে দাঁড়াতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সমাজে দীনি গবেষণামূলক ফতোয়াসহ নানাভাবে মানুষকে সচেতন করতে বলা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :