পরিণত বয়সের একটা সময় পর বার্ধক্য সবারই আসে। আর বার্ধক্য আসলেই সবারই ধারণা শরীরে নানা রকম রোগ বাসা বাধবে। আপাতদৃষ্টিতে এটাই স্বাভাবিক। প্রাচীনকাল থেকেই ধারণা করা হয় বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ক্ষয় হতে শুরু করে। প্রাচীন গ্রিকে একটি বিশেষ ধারণা ছিল যে, তারা কিছু কিছু রোগের জন্য বার্ধক্যকেই দায়ি করত। তবে পরবর্তীতে গবেষকরা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করে যে সবরোগের জন্য বার্ধক্য দায়ি নয়। তবে বার্ধক্য শুরু হয় হওয়ার সঠিক বয়স নিয়ে রয়েছে নানা অভিমত। কবি দান্তে মনে করেন ৪৫ বছরের পর থেকে বার্ধক্য শুরু হয়। ব্রিটিশদের একটি জরিপে বলা হয়, বার্ধক্য শুরু হওয়ার বয়সসীমা হল ৫৯ বছর । সেখানে ৫৯ এর পর থেকে সবাইকে বৃদ্ধ হিসেবে গণ্য করা হয়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা মনে করেন ৬০ এর পর থেকেই বার্ধক্য শুরু হয়। তবে বয়স যাই হোক বার্ধক্যেরও যে কিছু সুবিধা আছে তা কিন্তু অনেকের অজানা।
ঠাণ্ডা কম লাগা
শুধুমাত্র মস্তিস্কের কারণেই মানুষ জ্ঞানী হয় না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেও মানুষ জ্ঞানী হয়। মানুষের ইমিউন সিষ্টেম অর্থাৎ রোগপ্রতিরোধ পদ্ধতি প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক শক্তিশালী বিপদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আমাদের দেহ পুলিশবাহিনীর মত প্রতিনিয়ত সেগুলো চিহ্নিত করছে। বাইরের শত্রুর মোকাবেলার জন্য আমাদের দেহে শ্বেতরক্তকণিকা উৎপাদন করছে। কুইনল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক বলেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে বয়ষ্কদের দেহে শ্বেরক্তকণিকা উৎপাদন অপ্রাপ্ত বয়স্কদের তুলনায় বেশি হয়। তাই যেখানে ২০ বছরের কারো ঠাণ্ডা লাগতে পারে বছরে দুই থেকে তিনবার। সেখানে বৃদ্ধদের ঠাণ্ডা লাগে বছরে এক থেকে দুইবার।
এলার্জি কমে যাওয়া
একটি সুখবর হল যদি আপনার এলার্জি থাকে তাহলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাও কমতে থাকে। যদিও এলার্জির উত্পত্তি নিয়ে নানা রকম তর্ক বিতর্ক বহুদিন ধরে চলে আসছে। ধারণা করা হয়, ইমিউনোগ্লোবিউলিন-ই এবং দেহে নানা রকম এন্টিবডির কারণে এলার্জির উৎপত্তি হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এগুলো কমে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় ফলে এলার্জিও কমতে থাকে।
বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মস্তিস্কও দক্ষ হতে শুরু করে। তুবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক বলেন, জন্মের পর ২৮ সপ্তাহের মধ্যেই মানুষের মস্তিস্কের নিউরণ পরিপক্ব হতে শুরু করে। তবে এর মধ্যে কিছু নিউরণ অপরিপক্ব থেকে যায় যা কিশোর বয়সের পর থেকে আবার পরিপক্ব হতে শুরু করে। তাই প্রাপ্তবয়স্ক ও মধ্যবয়স্ক থেকে বয়স্কদের বুদ্ধিমত্তা বেশি হয়।
মাইগ্রেনের সমস্যা কমে যায়
মাইগ্রেনের সমস্যার কারণে মাথা ব্যথা হয়। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে মাথা ব্যথার প্রবণতাও কমতে থাকে। সম্প্রতি সুইডেনের এক গবেষণায় দেখা যায় ১৮ বছর বয়সের মানুষের চেয়ে বৃদ্ধ মানুষের মাইগ্রেনের ফলে মাথা কম ব্যথা হয়।
ঘাম কম হওয়া
জেনে খুশি হওয়ার কথা যে একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে বৃদ্ধ বয়সে দেহে ঘাম কম হয়। একজন ২০ বছরের ব্যাক্তির তুলনায় ৫০ কিংবা ৬০ বছরের ব্যাক্তির ঘাম কম হয়।
তাহলে বোঝা যাচ্ছে বৃদ্ধরা প্রাপ্তবয়স্ক থেকে বেশি স্বাস্থ্যবান। অনেক বয়স্ক ব্যাক্তিদের মধ্যে নারীদের ৮৪ বছর এবং পুরুষদের ৮০ বছর বেঁচে থাকতে দেখা যায়। ৯৫ শতাংশ নারীই ৮০ বছরের পরে আরও একটি বছর বেঁচে থাকার সুযোগ পায়। অনেকের আবার ১০০ বছর বেঁচে থাকারও খবর শোনা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৫ ঘণ্টা, ০৮ নভেম্বর ২০১৫।
আপনার মতামত লিখুন :