এক রাতের জন্য ১০ হাজার টাকা ‘মৌখিক চুক্তিতে’ বাহাউদ্দিন ইভানের বনানীর বাসায় আসেন তরুণী। কোনো প্রকার জোরপূর্বক নয় বরং দু’জনের সম্মতিতেই ওই তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের কথা স্বীকার করেছেন ইভান।
বুধবার ঢাকার হাকিম আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জন্মদিনের কথা বলে বনানীতে নিজ বাসায় ডেকে ধর্ষণ মামলার একমাত্র আসামি ইভান এ তথ্য দেন।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক ও ওই রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ইভান বলেন, খুব বেশি দিনের সম্পর্ক নয় ওই তরুণীর সঙ্গে। ঘটনার আগে দু-এক বার ওই তরুণীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে ইভানের।
ঘটনার ওই রাতে তরুণীকে জোর করে কোনো কিছু করেননি ইভান। এক রাতের জন্য বাসায় এসে থাকতে ওই তরুণীকে ১০ হাজার টাকায় কন্ট্রাক্ট (মৌখিকভাবে) করা হয়। আর সে অনুসারেই ওই তরুণী ঘটনার রাতে ইভানের বাসায় আসেন। গভীর রাতে তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন হয় দু’জনের সম্মতিতেই।
৪ দিনের রিমান্ড শেষে এদিন ইভানকে আদালতে হাজির করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরীর আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
জবানবন্দিতে ইভান জানান, মৌখিক কন্ট্রাক্টের ভিত্তিতে ওই তরুণী ইভানের বাসায় এলেও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের পর গভীর রাতে তরুণী তার এক বন্ধুকে বাসায় আসতে বলেন। এ বিষয়টি ইভানের পছন্দ হয়নি। এতে ইভানের পরিবারের সদস্যরা টের পেয়ে যেতে পারে।
ফলে ইভান ওই তরুণীকে ফোন করে তার বন্ধুকে বাসায় ডাকতে বারণ করেন। কিন্তু তরুণী তা শোনেননি। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। তরুণী অবাধ্য হলে সম্মানের ভয়ে ওই তরুণীকে বাসা থেকে বের করে দেন ইভান। ঘটনার সময় তরুণীকে কোনো প্রকার ভয়-ভীতি বা মারধর করা হয়নি বলেও আদালতকে জানান ইভান।
একই সঙ্গে ধর্ষণের (সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন) পর তা ভিডিও ধারণের বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি।
আদালত সূত্র জানায়, মামলাটির তদন্তকাজ দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। ৯ জুলাই আসামি বাহাউদ্দিন ইভানের ডিএনএ প্রফাইলিং সংরক্ষণ এবং তরুণীর ইউরিন ও ব্লাড পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
এর আগে ৭ জুলাই ইভানকে এ মামলায় ৪ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। ৬ জুলাই বিকালে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম দেওভোগ এলাকায় খালার বাড়ি থেকে ইভানকে গ্রেফতার করে র্যাব। আর ধর্ষণের অভিযোগে ধর্ষিতা তরুণী বাদী হয়ে ৫ জুলাই রাজধানীর বনানী থানায় এ মামলাটি করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বাহাউদ্দিন ইভানের (২৮) সঙ্গে ১১ মাস ধরে ফেসবুকে বন্ধুত্ব হয় ধর্ষিতা তরুণীর। এ বন্ধুত্বের সূত্র ধরে দু’জনের ঘোরাঘুরি ও দেখা-সাক্ষাৎও হয়। আর এ বন্ধুত্ব থেকেই ৪ মাস আগে প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়। ৪ জুলাই ইভান (আসামি) ফোন করে জানায় তার জন্মদিনের কথা। ওই জন্মদিনে সে তাদের সম্পর্কের কথা পরিবারকে জানাবে ও তরুণীকে পরিচয় করিয়ে দেবে।
এরপর ৪ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইভানের বাসায় যান ওই তরুণী। বাসায় মা-বাবা কোথায় জানতে চাইলে ইভান বলেন, তারা (মা-বাবা) অসুস্থ, ঘুমিয়ে আছেন। তাদের বিরক্ত করা উচিত হবে না। সকালে পরিচয় করিয়ে দেবে।
বাসায় জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কোনো আলামত না দেখে তরুণী ভয় পান। চলে আসতে চাইলে ইভান তাতে বাধা দেন। ইভান ওই তরুণীকে রাতের খাবার ও নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ান।
নেশা করতে রাজি না হলে ইভান ওই তরুণীকে বলেন, একদিন খেলে কিছু হবে না। এরপর রাত ১টার দিকে ইভানের ঘরে ওই তরুণীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেন। ওই তরুণী চিৎকার শুরু করলে ওই তরুণীর ব্যাগ রেখে রাত সাড়ে ৩টার দিকে বাড়ি থেকে বের করে দেন ইভান। ২৫ জুলাই এ মামলার পুলিশ প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে।
গো নিউজ২৪/এএইচ
আপনার মতামত লিখুন :