দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রির প্রথম দিন ফরম সংগ্রহ করেছেন ৮১০ জন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রীসহ অন্যান্য সংগঠনের পদধারীরা রয়েছেন। এই তালিকায় মন্ত্রী-এমপিদের স্ত্রী, আইনজীবী, অভিনেত্রী, এনজিও কর্মকর্তা, হিজড়াসহ বিভিন্ন পেশার নারীরা আছেন।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা দেওয়ার প্রথম দিন ছিল। এদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে এসব তারকা ফরম সংগ্রহ করেন। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নের আবেদন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে।
আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান জানান, দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রির প্রথম দিন ফরম সংগ্রহ করেছেন ৮১০ জন। এতে আয় হয়েছে ৪ কোটি ৫ লাখ টাকা।
তিনি জানান, প্রথম দিন বিক্রি হওয়া ৮১০টি ফরমের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৭৫টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬২টি, সিলেটে ২৬টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪৯টি, রংপুরে ৭৫টি, রাজশাহীতে ৯০টি, খুলনায় ৭৭টি এবং বরিশাল বিভাগের জন্য বিক্রি হয়েছে ৫৬টি।
এবার সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিটি মনোনয়ন ফরমের মূল্য ধরা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা, যা একাদশ জাতীয় সংসদের ক্ষেত্রে ছিল ৩০ হাজার টাকা। ফলে গতবারের চেয়ে মূল্য প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ক্ষেত্রে।
সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন, চট্টগ্রাম বিভাগে অভিনেত্রী নিপুণ আক্তার, বগুড়া থেকে অপু বিশ্বাস, কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, রোকেয়া প্রাচী, সোহানা সাবা, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, তানভিন সুইটি, জাকিয়া মুন, সৈয়দা কামরুন নাহার শাহনূর, শামীমা তুষ্টি, তারিন প্রমুখ। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা।
অপু বিশ্বাস বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে সুযোগ দিলে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করবো। বিশেষ করে গ্রামের অনগ্রসর মেয়েদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আমার।’ সোহানা সাবা বলেন, ‘আমরা নতুন জেনারেশন, দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াই। বিদেশে যা দেখি, দেশকে ও দেশের মানুষকে সেভাবে দেখতে চাই। আমার বাবা আওয়ামী লীগপন্থি ও দেশপ্রেমিক ছিলেন।’
এদিন সকালে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আভাস দেন, সংস্কৃতি অঙ্গনের কেউ কেউ মনোনয়ন পেতে পারেন।
টাঙ্গাইল থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দলটির শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, আব্দুল মতিন খসরুর স্ত্রী সেলিমা সোবহান খসরু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেত্রী শ্যামলি আক্তার, যুব নারী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও লৌহজং উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রানু আখতারসহ অনেকে।
শামসুন্নাহার চাঁপা বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করবো। সামাজিক ও নানামুখী উন্নয়ন করতে হবে। এলাকায় গিয়ে মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। মানুষের কী অসুবিধা আছে, কীভাবে বসবাস করছে... সবই দেখতে হবে।’
হুইল চেয়ারে এসে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন সালমা মাহবুব। পরে তিনি বলেন, ‘শৈশব থেকেই আমার পোলিওর সঙ্গে লড়াই। কয়েক দশক ধরে প্রতিবন্ধীদের অধিকার আদায়ে কাজ করছি। প্রতিবন্ধী ভাতা বৃদ্ধি, বাংলা সর্বজনীন প্রবেশগম্যতা গাইডলাইন প্রণয়ন, প্রতিবন্ধীদের উপযোগী স্থাপনা নির্মাণে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছি। সংসদ সদস্য হতে পারলে সেগুলো করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। সেজন্য আমি মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।’
রংপুর থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন হিজড়া রানী আক্তার। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিলে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য কাজ করতে পারবো। সেইসঙ্গে সমাজের অবহেলিত মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা বড় দল, সবাই মনোনয়ন চাইতে পারেন। কিন্তু সবাইকে তো আর মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব না। মনোনয়ন দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংরক্ষিত আসনে তাদেরই মূল্যায়ন করা হবে যারা, ত্যাগী-যোগ্য এবং দলের জন্য কাজ করেছেন। আমাদের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের পর থেকেই পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে কাজ শুরু করে দেন। জেলা সফরে গিয়েও যোগ্য কাউকে দেখলে তার নাম লিখে রাখেন। সময়মতো সেটা কাজে লাগান।’
এর আগে রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্থাপিত প্রশাসনিক বিভাগ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট বুথে গিয়ে ফরম সংগ্রহ এবং জমা দেওয়া যাবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ এবং তৃতীয় তলায় রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় সব বিভাগের মনোনয়ন ফরম জমা নেওয়া হবে।
এদিকে, মঙ্গলবার সংরক্ষিত ৫০টি নারী আসন বণ্টন প্রশ্নে ইসি সচিব জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের অংশের নারী প্রার্থীর জোট করে দিয়েছেন। জাতীয় পার্টি তাদের ১১টি আসনে এককভাবে নির্বাচন করবে। ফলে আইন অনুযায়ী জাতীয় পার্টি পাবে ২টি আসন এবং আওয়ামী লীগ, স্বতন্ত্র ও তাদের ১৪ দলীয় জোট পাবে ৪৮টি আসন। এই বিভাজন অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিল ও বাছাইসহ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন আগামী ১৪ মার্চ নির্ধারণ করে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজধানীর আগারগাওঁয়ে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত কমিশন সভা শেষে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম এ তফসিল ঘোষণা করেন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখ আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি রবিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি। আপিল দায়ের ২২ ফেব্রুয়ারি। আপিল নিষ্পত্তি ২৪ ফেব্রুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ ফেব্রুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ ২৭ ফেব্রুয়ারি। ভোটগ্রহণ হবে ১৪ মার্চ। ভোটগ্রহণ চলবে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব মনিরুজ্জামান এই নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
আপনার মতামত লিখুন :