মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতিতে বাংলাদেশ কিছুটা এগিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওকলার তথ্য বলছে, গত এক বছরে বাংলাদেশের ইন্টারনেটের ডাউনলোড ও আপলোড গতি বেড়েছে। তারপরও মোবাইল ইন্টারনেটে উগান্ডার মতো দেশের চেয়েও ৪১ ধাপ পেছনে বাংলাদেশ। তাছাড়া টোগো, কেনিয়ার মতো দেশগুলোর চেয়েও ইন্টারনেটের গতির র্যাংকিংয়ে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ।
তবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতির ক্ষেত্রে উগান্ডাকে বহু পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, ইরান, পাকিস্তান ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে বাংলাদেশের চেয়ে বেশ পিছিয়ে। দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে নেপাল (৮৭তম) ও ভারত (৮৯তম)।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইন্টারনেটের গতি কেমন, তা তুলে ধরে প্রতি মাসে স্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্স নামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওকলা। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোবাইল ইন্টারনেটে বিশ্বের ১৪২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১১তম। মোবাইল ইন্টারনেটের ডাউনলোড স্পিড ২০ দশমিক ৬৬ এমবিপিএস। আর আপলোড স্পিড ১০ দশমিক শূন্য ৬ এমবিপিএস।
২০২২ সালের নভেম্বরে মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে ওকলার র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১৯তম। অর্থাৎ এক বছরে র্যাংকিং ৮ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। একই সময়ে (২০২২ সালের নভেম্বর) মোবাইল ইন্টারনেটে গড় ডাউনলোড গতি ছিল ১৩ দশমিক ৯৫ এমবিপিএস এবং আপলোড গতি ছিল ৮ এমবিপিএসের নিচে। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে মোবাইল ইন্টারনেটের ডাউনলোড গতি ৬ দশমিক ৭১ এমবিপিএস বেড়েছে। আপলোড গতি বেড়েছে ২ দশমিক ১ এমবিপিএসের বেশি।
মোবাইল ইন্টারনেটে এখন বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটিতে ডাউনলোড স্পিড ২৬৯ দশমিক ৪১ এমবিপিএস। আপলোড স্পিড ২৫ দশমিক ৪৯ এমবিপিএস। ২০৬ দশমিক ৮০ এমবিপিএস গতি নিয়ে ওকলার তালিকায় মোবাইল ইন্টানেটে দ্বিতীয় অবস্থান কাতার, ১৯১ দশমিক ৭৪ এমবিপিএস গতি নিয়ে তৃতীয় কাতার।
অন্যদিকে মাত্র ৩ এমবিপিএস গতির মোবাইল ইন্টারনেট নিয়ে র্যাংকিংয়ে সবচেয়ে নিচে কুবা (১৪২তম)। তার ঠিক ওপরে ১৪১তম অবস্থানে তালেবান সরকারের শাসনে থাকা আফগানিস্তান। দেশটিতে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি ৪ দশমিক ৭৩ এমবিপিএস। ৭ দশমিক ১৫ এমবিপিএস গতি নিয়ে নিচের দিক থেকে তৃতীয় ইয়েমেন (১৪০তম)।
নতুন তরঙ্গ (স্পেকট্রাম) কেনার কারণে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি বাড়ছে বলে জানান দুটি মোবাইল অপারেটরের কর্মকর্তারা। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গতি বাড়াতে নিলামে তরঙ্গ কেনার জন্য বিটিআরসি থেকে চাপ থাকে। ব্যবসায়িক পলিসিতে লাভজনক অবস্থানে থাকতে অনেক সময় তরঙ্গ কেনায় আপত্তি থাকলেও বাধ্য হয়ে কিনতে হয় তাদের। যদিও গ্রাহকরা এর সুফল পেয়ে থাকেন।
ঢাকাসহ সারাদেশে চাহিদামতো আরও টাওয়ার বসানো গেলে গতি আরও বাড়ানো সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তারা।
এদিকে, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতিতে কিছুটা উন্নতি করলেও র্যাংকিংয়ে পিছিয়েছে বাংলাদেশ। ওকলার তথ্যানুযায়ী—বাংলাদেশের ব্রডব্যান্ড গ্রাহকরা অক্টোবর মাসে গড়ে ৩৮ দশমিক ৬৫ এমবিপিএস ডাউনলোড গতির সেবা পেয়েছেন। আর আপলোড গতি ৩৯ দশমিক ৯১ এমবিপিএস।
২০২২ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ডাউনলোড স্পিড ছিল ৩৪ দশমিক ৮৫ এমবিপিএস এবং আপলোড স্পিড ছিল ৩৭ দমমিক ৪১ এমবিপিএস। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে ডাউনলোড স্পিড বেড়েছে ৩ দশমিক ৮০ এমবিপিএস। আর আপলোড স্পিড বেড়েছে ২ দশমিক ৫০ এমবিপিএস।
এমবিপিএস হিসাবে গতি কিছুটা বাড়লেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে কয়েক ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। ২০২২ সালের নভেম্বরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০২তম। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ৬ ধাপ পিছিয়ে ১০৮তম অবস্থানে নেমে গেছে।
তবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে তুরস্ক, পাকিস্তান, উগান্ডা, শ্রীলঙ্কা, ইরান, কেনিয়া পিছিয়ে রয়েছে। মোবাইল ইন্টারনেটের মতো ব্রডব্রান্ড সংযোগের ক্ষেত্রে তলানিতে অবস্থান করছে কুবা (১৮২তম)। তার ঠিক ওপরে ৩ এমবিপিএস গতি নিয়ে ১৮১তম অবস্থানে আফগানিস্তান।
অন্যদিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতিতে সবচেয়ে এগিয়ে সিঙ্গাপুর। দেশটির ডাউনলোড স্পিড ২৬৪ দশমিক ১৫ এমবিপিএস। র্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে হংকং (২৬৩.০৭ এমবিপিএস), তৃতীয় অবস্থানে চিলি (২৪৮.৬৫ এমবিপিএস)।
ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক নিয়ে কিছু কাজ করলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি আরও বাড়িয়ে র্যাংকিংয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক।
তিনি বলেন, ‘গতি বাড়ানো বলেন আর র্যাংকিংয়ে উন্নতির কথা বলেন, এটা এগিয়ে নিতে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক নিয়ে কিছু কাজ করতে হবে। শহরভিত্তিক ব্যান্ডউইথগুলো থেকে কিন্তু আমরা গ্রাহকের চাহিদামতো এমবিপিএস গতি দিতে পারছি। কেউ যদি ১০ এমবিপিএসের জয়গায় ২০ এমবিপিএসও চান, তবুও দেওয়া সম্ভব। সামান্য দাম বাড়িয়ে এটা দেওয়া সম্ভব হয়। এটা ঢাকার বাইরের গ্রাহকদের দিতে গেলে খরচটা বেড়ে যায়। সেটা নিয়ে এখন কাজ করা উচিত।’
ঢাকাকেন্দ্রিক ক্যাশ সার্ভিস সেন্টার থাকাটাও গতি বাড়ানোর পথে বাধা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্যাশ সার্ভিসটা ঢাকাকেন্দ্রিক। বিটিআরসির নিরাপত্তা পলিসির কারণে এটা বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব হয়নি। ক্যাশ সার্ভিসটা ঢাকার বাইরেও বড় শহরগুলোতে বসানো গেলে এবং সব আইএসপির কাছে এটা রাখা গেলে গতি আরও বাড়ানো যেতো। তারপরও আমরা সাধ্যের মধ্যে গ্রাহককে ভালো গতির ইন্টারনেট সেবা দেওয়া চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
জানতে চাইলে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের পরিচালক মো. গোলাম রাজ্জাক বলেন, ‘ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। সরকারের দায়িত্বশীলদের নির্দেশনায় কাজ করছি। ওকলার প্রতিবেদনটা আমরা দেখে থাকি। সেখানে অনেক বিষয় বা ইনডিকেটর থাকে। এবারের প্রতিবেদনটা এখনো আমি দেখিনি। প্রতিবেদন দেখার আগে আমরা কতটা এগিয়েছি বা পিছিয়েছি, তা নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
আপনার মতামত লিখুন :